ভারতীয় হিসেবে আমাদের চুলের যত্নের রুটিনের একটা অন্যতম জরুরি অঙ্গ হল চুলে তেল মাখা। ছোটবেলায় মা ঠাকুমারা যত্ন করে চুলে তেল মাখিয়ে বিনুনি বেঁধে দিতেন, এমন স্মৃতি হয়তো অনেকেরই আছে। গরম তেল দিয়ে মাথায় মাসাজ করার একাধিক উপকারিতা রয়েছে, আর মজবুত সুস্থ চুল চাইলে এই গরম তেল মাসাজ করা অত্যন্ত দরকারিও বটে! রুক্ষতা কমিয়ে চুল কোমল করে তুলতে চাইলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট খুবই উপকারী, পাশাপাশি নির্জীব হেয়ার ফলিকল সক্রিয় করে তুলে চুলের ঘনত্ব বাড়াতেও হট অয়েল মাসাজ সাহায্য করে। সাপ্তাহিক হট অয়েল ট্রিটমেন্টের সম্পূর্ণ সুবিধে নিতে চাইলে এই লেখা আপনারই জন্য! উপকারিতা আর পদ্ধতি থেকে শুরু করে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেতে আর সেই সঙ্গে কোন ধরনের চুলের জন্য কোন তেল সবচেয়ে ভালো জানতে পড়তে থাকুন!
- 1. স্ক্যাল্প আর্দ্র রাখে
- 2. রুক্ষতা কমায়
- 3. চুলের বৃদ্ধি ঘটায়
- 4. খুসকি নির্মূল করে
- 5. স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে তোলে
- হট অয়েল ট্রিটমেন্টের জন্য সেরা তেল
- কীভাবে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করবেন
- হট অয়েল ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে কিছু তথ্য
1. স্ক্যাল্প আর্দ্র রাখে

বারবার শ্যাম্পু, একাধিক হেয়ার স্টাইলিং প্রডাক্টের ব্যবহার, আর পরিবেশের দূষণ এবং আরও নানা ক্ষতিকর প্রভাবে আপনার স্ক্যাল্প শুষ্ক হয়ে যায়। এ থেকে যেমন খুসকি বাড়তে পারে, তেমনি একটা সময়ের পর সুস্থ চুলের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। সপ্তাহে একবার কি দু'বার হট অয়েল ট্রিটমেন্ট/hot oil treatment করলে স্ক্যাল্পে গভীর আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় এবং এর ফলে চুল মজবুত হয়ে ওঠে, খুসকিও কমে যায়।
2. রুক্ষতা কমায়

রুক্ষতা আর শুষ্কতা/Dryness and frizz একদিকে যেমন বিরক্তিকর, তেমনি এর ফলে চুল নির্জীব আর ক্ষতিগ্রস্ত দেখায়। হট অয়েল মাসাজের মতো সহজ ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত রুক্ষ শুষ্ক চুলে আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব।
3. চুলের বৃদ্ধি ঘটায়

হট অয়েল ট্রিটমেন্টের সবচেয়ে ভালো দিকটা হল মাথা আর স্ক্যাল্পের মাসাজ। স্ক্যাল্প মাসাজ/Massaging your scalp করলে নির্জীব হেয়ার ফলিকলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তেলে যে পুষ্টি থাকে তা ফলিকলগুলোকে মজবুত করে তোলে। এই দুটি বিষয় এক হয়ে সুস্থ আর মজবুত চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
4. খুসকি নির্মূল করে

শুষ্ক, আঁশ ওঠা, চুলকানিযুক্ত ত্বক স্নিগ্ধ আর আর্দ্র করে তোলার সেরা এবং সবচেয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতি হল হট অয়েল মাসাজ/Hair oil massages। খুসকির অন্যতম কারণ স্ক্যাল্পের শুষ্কতা, তাই হট অয়েল ট্রিটমেন্ট নিয়মিত করলে খুসকি কমবে, দীর্ঘ সময়ের জন্য স্ক্যাল্প থাকবে সুস্থ আর পুষ্টিতে ভরপুর।
5. স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে তোলে

সম্প্রতি যদি আপনার অত্যধিক চুল ওঠা শুরু হয়, বা চুলের বৃদ্ধি কমে গিয়ে থাকে, তা হলে হয়তো আপনার স্ক্যাল্পে যথেষ্ট রক্ত পৌঁছচ্ছে না। রক্তের মাধ্যমে পুষ্টিগুণ স্ক্যাল্পে পৌঁছয় যা চুলের বৃদ্ধি ঘটায়/ promoting hair growth। রক্তের সরবরাহে বাধা এলে চুলের নানা সমস্যা দেখা দেয়। নিয়মিত হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করলে স্ক্যাল্প পর্যাপ্ত পুষ্টি পায়, পাশাপাশি হালকা হাতে স্ক্যাল্প মাসাজের ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, ফলে চুল হয়ে ওঠে মজবুত আর সুস্থ।
হট অয়েল ট্রিটমেন্টের জন্য সেরা তেল

- নারকেল তেল
- আমন্ড অয়েল
- জোজোবা অয়েল
- অ্যাভোকাডো অয়েল
- অলিভ অয়েল
চুলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করাতে হলে নানাধরনের তেল ব্যবহার করা যায়। কোন তেল ব্যবহার করবেন তা নির্ভর করে আপনার চুলের ধরন, টেক্সচার, আর চুলের বর্তমান অবস্থার ওপর। সবচেয়ে বেশি যে সব হেয়ার অয়েল/ hair oils ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে নারকেল, আমন্ড, জোজোবা, অলিভ আর অ্যাভোকাডো। প্রতিটি তেলই স্বাভাবিক আর্দ্রতা গুণসম্পন্ন এবং অত্যন্ত শুকনো চুলেও আর্দ্রতা ফিরিয়ে এনে কোমল আর পুষ্টিগুণে ঝলমলে করে তুলতে সক্ষম।
কিন্তু আপনার স্ক্যাল্প যদি তেলতেলে হয়, তা হলে হেয়ার অয়েল বাছতে হবে একটু সাবধানে। প্রথমত, নারকেল তেল এড়িয়ে চলুন, কারণ এই তেল ভারী, ফলে আপনার চুল নেতিয়ে পড়ে, স্ক্যাল্পও অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে যেতে পারে। তাই আমন্ড বা জোজোবার মতো হালকা তেল ব্যবহার করুন। এ সব তেল অত্যন্ত হালকা বলে স্ক্যাল্পে নিমেষে শুষে যায়, কোনও তেলাভাবও থাকে না।
কীভাবে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করবেন

ধাপ 01: হট অয়েল ট্রিটমেন্ট থেকে উপকার পেতে হলে চুল আর স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকা দরকার। তাই আগে কোমল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন, তারপর চুল আধশুকনো হলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট শুরু করুন।
ধাপ 02: পরিমাণমতো পছন্দের কেরিয়ার অয়েল নিন, বাটিতে করে 30 সেকেন্ড গরম করুন। তেল যেন পুরো চুলে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার মতো গরম হয়। তবে এমন গরম করবেন না যাতে ছ্যাঁকা লাগে! এই তেলে কয়েকফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলও ফেলে দিতে পারেন।
ধাপ 03: হালকা হাতে চুল আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে নিন। এতে চুল শ্যাম্পু করার পরেও কোমল থাকে, রুক্ষ হয় না।
ধাপ 04: এবার পুরো চুল কয়েকটা ভাগে ভাগ করে নিয়ে স্ক্যাল্পে আঙুলে করে, বা তুলোয় করে বা ড্রপারে করে তেল লাগান। কোমল হাতে মাসাজ করুন যাতে তেল পুরোপুরি স্ক্যাল্পে শুষে যায়। বাকি তেলটা চুলে মেখে নিন।
ধাপ 05: তেল আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা রেখে দিন (গরম তোয়ালে বা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকেও রাখতে পারেন), তারপর কোমল শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে কিছু তথ্য

প্র. কত ঘন ঘন হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করা উচিত?
উ. যেহেতু হট অয়েল ট্রিটমেন্টে প্রাকৃতিক কোল্ড-প্রেসড অয়েল/ cold-pressed oils ব্যবহার করা হয়, তাই ঘন ঘন করলেও এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। সাধারণত সপ্তাহে একবার ট্রিটমেন্ট করা হয়। তবে আপনার চুল যদি কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের কারণে অত্যন্ত শুষ্ক আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তা হলে সপ্তাহে দু'বার করতে পারেন।
প্র. হট অয়েল ট্রিটমেন্টের আগে কি শ্যাম্পু করা উচিত?
উ. অধিকাংশ মেয়ে চুল না ধুয়েই হেয়ার অয়েল লাগানোর ভুল/ mistake of applying hair oil করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে তা করা উচিত নয়। কারণ তেল চুলে সম্পূর্ণ শোষিত হওয়ার জন্য স্ক্যাল্প সম্পূর্ণ পরিষ্কার, তেলময়লা, ঘাম আর প্রডাক্টের অবশেষমুক্ত থাকা দরকার। তা ছাড়া তেল পুরো শুকনো চুলের চেয়ে আধভেজা চুলে বেশি সহজে শোষিত হয়। তাই হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করানোর আগে চুল ধুয়ে নেওয়া সবসময়ই ভালো, তারপর তেল মাখা হয়ে গেলে আর একবার শ্যাম্পু করে নেওয়া দরকার।
প্র. হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করানোর সময় কী কী বিষয় এড়িয়ে চলা উচিত?
উ. কিছু নিয়ম সবসময় মেনে চলা উচিত, যেমন -
স্ক্যাল্পে লাগানোর আগে তেলের তাপমাত্রা দেখে নিন। তেল খুব গরম হলে স্ক্যাল্প পুড়ে গিয়ে ফলিকল চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
নতুন কোনও হেয়ার অয়েল ব্যবহার করার আগে সবসময় প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া দরকার, যাতে কোনও বিপরীত প্রতিক্রিয়া না হয়। বিশেষ করে যদি আপনার স্পর্শকাতর স্ক্যাল্প হয়, অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করবেন।
স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত তেল মাখবেন না। এমন পরিমাণে তেল মাখুন যা একবার শ্যাম্পু করেই সহজে ধুয়ে ফেলা যায়।
Written by Manisha Dasgupta on 10th Dec 2021